সান্ধ্য সক্রেটিস। 'ডলার্স ট্রিলজি'। বিজয় দে।


ভালো-খারাপ-মন্দ-কুৎসিত কিছু মানুষের লোভ-কুটিল-দ্বন্দ 

আর প্রতিরোধ-প্রতিশোধের গপ্পো


বিজয় দে

 

1)  A fistful of Dollars (1964) 99 minutes 

2) For a Few Dollars More (1965) 132 minutes 

3) The Good,Bad and the Ugly (1966) 177 minutes

 

অথবা “ডলার্স ট্রিলজি” (Dollars  Trilogy)  কিম্বা “ম্যান উইথ নো নেম”  ট্রিলজি (Man With No Name trilogy)                                                                                                                                                                                                                                                                ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬, পরপর তিন বছরে তিনটি ছবি। হলিউডের যে ছবিগুলিকে আমরা “কাউবয়” বা “ওয়েস্টার্ন” মুভি বলে থাকি বা রূপালি-পর্দায় দেখে থাকি, সেই রকমভাবে ইউরোপে, ইতালি-স্পেন-জার্মানীতে, কিছু ছবি এক সময় নির্মিত হয়েছিলো (বা এখনও হয়তো হচ্ছে, যাদের আলাদা ভাবে “স্প্যাগেটি-ওয়েস্টার্ন” নামে অভিহিত করা হয়। মানে শুধু প্রধান চরিত্রের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সব হলিউডের থাকবে কিন্তু শ্যুটিং-রেকর্ডিং-ডাবিং-স্টুডিও সহ পরিচালনার সমস্ত কাজ হবে ইতালি কিম্বা স্পেনে। তাদেরই অর্থানুকূল্যে প্রযোজিত-পরিচালিত ছবিগুলি তৈরির পর’ ইওরোপ- আমেরিকা-কানাডা সহ পৃথিবীর সব দেশে ছড়িয়ে পড়তো। এই ধারার ছবির একজন বিখ্যাত পরিচালকের নাম Sergio Leone এবং তারই পরিচালনায় তৈরি হয়েছে এই তিনটি ছবি ,যে-ছবিগুলিকে একত্রে “ডলার্স ট্রিলজি” (Dollars Trilogy)নামে বিশেষভাবে পরিচিত হয়েছে।

তিনটি ছবির সাধারণ যোগসূত্র হচ্ছে, প্রধানতম চরিত্রে অভিনয় করেছেন ClinT Eastwood এবং তিনটি ছবিরই অনন্য সঙ্গীত-আয়োজন করেছিলেন যিনি, তিনি স্বনামধন্য Ennio Morricone। ছবি হয় তো দ্যাখেন নি, তবু শুধু এই ছবিগুলির টাইটেল বা থিম মিউজিক একেবারেই শোনেননি এমন বিদেশী-চলচ্চিত্র-প্রেমী মানুষ বিরল। যার সঙ্গী্তের সুর আজও কারও কারও সেলফোনের রিংটোন হয়ে বেজে ওঠে। যারা ক্লিন্ট ইস্টউড এবং শার্লি ম্যাকলীন অভিনীত Two Mules for Sister Sara, দেখেছেন, তারা জানেন ছবিতে ব্যবহৃত মরিকোনের সৃষ্ট আবহ-সঙ্গীত কতটা অব্যর্থ বা ব্যঞ্জনাময় হতে পারে! 

যাই হোক, তিনটি ছবির ভেতরে আরও একটি মিল, কাহিনীর পটভূমিতে আছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ডিপোজিট- ভল্টে রক্ষিত টাকা লুট সোনা-লুট ব্যাঙ্ক-লুট এবং অনিবার্য ভাবে খুন-জখম-বদলা, চোরের ওপরে বাটপারি,বা আমাদের ভাষায় এক সে বঢ়কর এক, এবং শেষ পর্যন্ত প্রকৃত দুষ্কৃতিকারীর যথাযথ শাস্তি ইত্যাদি। বলা বাহুল্য, এই তিনটি ছবি নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করার পরিসর এখানে নেই। তবু কয়েকটি প্রাসঙ্গিক তথ্য জানাই…

A fistful of dollars

Clint  Eastwood  “Joe” (0r the Man With No Name )               

Marianne  Koch (Marisol)                                                            

Johnny Wels ( Ramon Rojo)                                                          

W.Lukschy ( Sheriff John Baxter)


১) আলোচ্য প্রথম ছবিটির কাহিনী বিখ্যাত জাপানী পরিচালক Akira Kurosawa’র ১৯৬১ সালে নির্মিত ছবি Yojimbo দ্বারা অনুপ্রাণিত, যদিও তা’কোথাও স্বীকৃত হয় নি।                                               

২) এই ছবিতে অভিনয় করার পর’ ক্লিন্ট ইস্টউড আমেরিকা তথা বিশ্বে star হিসেবে পরিচিত হলেন।

৩) ২০১৪ সনে ৬৭তম কান্‌ চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবিটির ৫০ত্ম বার্ষিকী উদ্‌যাপনের সময় সমকালীন আরেক বিখ্যাত পরিচালক Quentin tarantino বলেছিলেন, এই ছবি (a fistful of dollars) “the greatest achievement in the history of cinema”।


For a few dollars more  

Clint  Eastwood “Manco” (or the Man With No Name )  Lee Van cleef ( Colonel Douglas Mortimer)                            

Gian Maria Volonte (El Indio )                                                   

Mario Brega ( Nino)

 

১) এই ছবির প্রধান চরিত্রেতে অভিনয় করার জন্য হলিউডের বিখ্যাত অভিনেতা Charles Bronsonকে ভাবা হয়েছিলো, এবং প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছিলো কিন্তু চিত্রনাট্য পছন্দ না হওয়াতে তিনি প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন।

২) ছবিটির চিত্রগ্রহণ হয়েছিলো স্পেনের আলমেরিয়া মরুভূমিতে এবং রোমের সিনসিনাটি স্টুডিওতে। মরুভূমিতে যে সেট নির্মাণ করা  হয়ে ছিলো ,তা’আজও অক্ষত আছে এবং পর্যটকদের দ্রস্টব্য হিসেবে “মিনি হলিউড “ নামে বিশেষভাবে পরিচিত ।

৩) এই ছবিতে এমন একটি অভিনব ব্যাপার,যা সচরাচর আমরা দেখিনি ,একটি বা দু’টি পকেট-ওয়াচ বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবহৃত হয়েছে, যে ঘড়িটি খুললেই মধুর মিউজিকাল টোন এবং ঘড়ির আওয়াজের সময়সীমা শেষ হলেই একটি অভাবিত ঘটনা ঘটে যায়। পরিচালকের উদ্দেশ্য একটাই, ঘটনা থেকে কিছু সময়ের জন্য দর্শকের মন যেন অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেয়া।


ক্লিন ইস্‌টিউড


The good, bad and the ugly 

Clint Eastwood “ Blondie”  (or the Man With No Name)       

Lee Van Cleef “ Angel Eyes”                                                          

Eli Wallach  (Tuco Benedicto)

 

১) এই ছবিতে অনেক দৃশ্যের পাশাপাশি ১৮৬২ সনের “আমেরিকার সিভিল ওয়ার”য়ের উল্লেখ-পূর্বক কিছু বীভৎস ও মর্মান্তিক দৃশ্য এমন ভাবে কাহিনীর ভেতরে সন্নিবেশিত হয়েছে, যা সম্পর্কে সমালোচকরা বলেছেন, এটি আসলে anti-war মুভি এবং পরিচালকের উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধের কদর্যময় রূপ এবং সাধারণ জনগণের অবর্ণনীয় কষ্ট বা প্রকারন্তরে যুদ্ধের অসারত্ব সম্পর্কে দর্শকদের অবহিত করা।

২) এই ছবির শেষ বা ক্লাইম্যাক্স যে বিস্তীর্ণ (Sad Hill Cemetery)  সমাধিক্ষেত্রটি দ্যাখানো হয়েছে সেটি স্পেনের সৈন্যবাহিনী রোমান এরিনার আদলে তৈরি করেছিলেন। আরও একটি কথা, এই ছবিটির ইতালিয়ান অরিজিনাল স্ক্রিপ্টে নাম ছিল The Good (one), The Ugly (one), The bad (one)। কিন্তু অনুবাদকের ভুলে বা অসতর্কতায় ছবিটির বর্তমান নাম The Good, The Bad and the Ugly, এরকম দাঁড়ায়। 

৩) এই ছবিটি নির্মাণে বাজেট ছিল ১ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার আর সর্বমোট উপার্জন করেছিলো ২৫ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার। ক্লিন্ট ইস্টউড পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন ২ লক্ষ ৫০ হাজার ডলার আর আমেরিকায় ছবিটির উপার্জনের শতকরা দশ ভাগ। প্রসঙ্গত, A Fistful of Dollars ছবিটির জন্য ক্লিন্ট ইস্টউড ৫০ হাজার ডলার পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন।

যারা এই ধরনের পুরোনো দিনের Action-Packed ছবি দেখতে ভালবাসেন, তারা যদি পর’ পর’ ছবিগুলি দ্যাখেন তবে নিশ্চিত একটি সামগ্রিক ধারণা তৈরি হবে।.


 হোমঠেক    সান্ধ্য জলপাইগুড়ি মূল পাতা

 

Comments

Popular posts from this blog

কল্যাণের সাথে কন্যামে । সত্যম ভট্টাচার্য

উপন্যাস পরিচয়। মুরাকামির উপন্যাস 'কাফকা অন দ্য শোর'। শুভ্র চট্টোপাধ্যায়

সাইকেলে নারীশক্তি আর টাউনের পুরোন যানবাহনঃ রণজিৎ কুমার মিত্র