হা টা রি (১৯৬২) : বিজয় দে
হা টা রি (১৯৬২)
বিজয় দে
দু'টি শব্দ ভিনদেশি, Hatari এবং Tequila, কেন জানিনা, শব্দ দু'টি হয় তো
বর্ণের ধ্বনি মাদকতার কারণে অনেকদিন ধরেই আমার অত্যন্ত প্রিয়। প্রথম শব্দটি আমাদের
আজকের আলোচ্য। আর দ্বিতীয়টি, Twquila, আসলে একটি মহার্ঘ সুরা-বিশেষ, যা দেশে-দেশে
খুবই জনপ্রিয়। তবে সুরা চেখে দ্যাখা হোক বা না-হোক, Tequila music নামে যন্ত্রসঙ্গীত-আয়োজনের
সাথে আমরা নিশ্চয় কমবেশি পরিচিত। মনে পড়ছে আমাদের যৌবন-কালে, কালীপূজা-ভাসানের সময়,
এই music না বাজলে বা এর সহযোগে না নাচলে উদ্যোক্তাদের আয়োজন যেন অসম্পূর্ণ থাকত এবং
এটা তো এই জেলাশহরেই নিজের চোখে দেখেছি।
যাই হোক, এই আলোচনা সুরা নিয়ে একেবারেই নয়, আমাদের বিষয়, ১৯৬২ সালে নির্মিত,
Howard Hawks পরিচালিত ১৫৭ মিনিটের চলচ্চিত্র “হা টা রি”! আর ‘হাটারি’র মানে যা জানা
গেছে ,আফ্রিকান সোয়াহিলি ভাষায় “হাটারি” শব্দের অর্থ “বিপদ” বা danger! তা বিপদই বটে,
পদে পদে বিপদের আশঙ্কা!
অনেক কাল আগে যখন বন্যপ্রাণী-সম্পর্কিত আইন-কানুন আজকের মত এত কড়া ছিলনা,
যখন বিধি নিষেধ অনেকটাই শিথিল, তখন দেশে দেশে এমন কিছু প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছিল, যাদের
কাজ ছিল বন-জঙ্গল থেকে বন্যপ্রাণীদের ধরে খাঁচায় পুরে চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন চিড়িয়াখানা,
সার্কাস-কোম্পানি, বৈজ্ঞানিক-পরীক্ষাগার ইত্যাদি জায়গায় উপযুক্ত অর্থের বিনিময়ে
সরবরাহ করা। তেমনই একটি ব্যাবসায়িক সংগঠন Momella Game Company. এ’জন্যে বিভিন্ন দেশের
সুদক্ষ পেশাদার মানুষদের এই কোম্পানিতে নিয়োগ করা হয়েছিল। এদের দলপতির নাম Sean
Mercer (অভিনয়ে “কাউবয়” শ্রেণীর ছবিগুলির বিখ্যাত অভিনেতা John Wayne)। এবং এই চলচ্চিত্রের
ঘটনাস্থল, আফ্রিকা মহাদেশের Tanzania রাজ্য।
দল হিসেবে বেশ বড়, বিভিন্ন বুদ্ধিকলাকৌশলের মাধ্যমে বন্যপ্রাণীদের “শিকার”
হিসেবে ধরা, এটাই কাহিনীর মূল এবং তার পাশাপাশি এদের বন্ধুত্ব, বিচ্ছেদ, প্রেম ইত্যাদি
নিয়েই এই চলচ্চিত্র। প্রথমেই একটি গন্ডার ধরার দুঃসাহসিক দৃশ্য আছে যা আজও দেখলে শিহরিত
হতে হয়। আর শেষের দিকে একটি অভিনব বানর-ধরার দৃশ্য আছে, যেখানে তাদেরই উদ্ভাবিত রকেট-বম্বের
সাহায্যে একটি বানর-ভর্তি গোটা গাছকে জাল দিয়ে ঘিরে ফেলে যেভাবে তাদের আয়ত্তে আনা
হলো; এবং সেটি এত চমকপ্রদ যে আজও ভুলতে পারিনি। এরকম অনেক দৃশ্যের পাশাপাশি, একটি ঘটনার
কথা উল্লেখ করতেই হয়, যা প্রাণী নিয়ে হলেও সেটি অত্যন্ত মানবিক ।
একটি মা-হারা হাতি-শাবকের সাথে একজন দল-সদস্যা "Dallas”য়ের (অভিনয়ে
Elsa Martinelli) বন্ধুত্ব, হাতির বাচ্চাটিকে মায়ের স্নেহ দিয়ে লালন-পালন, এটি কখনও
ভোলার নয়। এর সাথে শিশু-হাতিদের পুকুরে স্নান করানোর একটি বহুজনপ্রিয় দৃশ্য আছে এবং
সেখানে নেপথ্যে Baby Elephant walk নামে যে মিউজিকটি বেজে ওঠে (সুরকার বিখ্যাত কম্পোজার
Henry Mancini) তা আজও যেন নতুন মনে হয়, আজও একই ভালোলাগা। বিশ্ববন্দিত ফরাসী পরিচালক
Jean-Luc Godard এই ছবিটিকে ১৯৬২ সনের শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।
লেখা আছে,এই ছবিটি একটি American Adventure Romantic Comedy. হ্যাঁ “রোমান্স”ও
আছে বটে, কিন্তু সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে, যতদূর শুনেছি, এই ছবিটি দ্যাখার ক্ষেত্রে
গুরুজনেরা কখনও বাধা হয়ে দাঁড়াননি।
বিশেষ অনুরোধ, পারলে ছবিটি আরেকবার দেখুন!
Comments
Post a Comment