হল্যান্ডো-পোল্যান্ডো-ফুটবল্যান্ডো: নিঝুম ঠাকুর
হল্যান্ডো-পোল্যান্ডো-ফুটবল্যান্ডো
নিঝুম ঠাকুর
ক'দিন ধরে কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা চলছে তাই নিয়ে গগনদার চায়ের দোকানে
সন্ধ্যা থেকেই সরগরম হয়ে উঠেছে।
পাকড়াশিবাবু খেলার প্রথম দিন থেকেই গগনদার চায়ের দোকানে লুঙ্গি পরে আসছেন।
বিশ্বকাপ ঘিরে গগনদার চায়ের দোকানে আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল এই দুই দলে আমরা
বিভক্ত হয়ে গেছি। শুধু পাকড়াশিবাবু এশিয়া মহাদেশ তথা জাপানের সমর্থক।ওনার বক্তব্য-"আর্জেন্টিনা
আর ব্রাজিলকে যারা সমর্থন করে তারা আর যাই হোক তারা ফুটবলের ফ বোঝেনা।শুধু সমর্থন করলে
হয়না ফুটবলটা বুঝতে হয়।"
গগনদা জিজ্ঞেস করলেন, “আচ্ছা পাকড়াশিদা ফুটবলের 'ফ'টা কি?”
পাকড়াশিবাবু যথেষ্ট উত্তেজিত হয়ে বললেন, “দেখো হে ছোকরা, আমরা এশিয়া মহাদেশের
মানুষ। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, পোলান্ডো, হোলান্ডো, ইংল্যান্ডো, লাতিন আমেরিকা,
ইউরোপের দেশ, যে সব দেশ কোনো দিন দেখিনি সেই সব দেশকে সমর্থন করে কী হবে? খেলে ওরা
আর ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা হই আমরা। আমি ভাই জাপানের দলে। জাপান জার্মানিকে হারিয়েছে,
স্পেনকে হারিয়েছে --- হুঁ হুঁ বাবা সাইওনারা। তারপর যে চুড়ান্ত পর্বে কাপ জিতবে শেষ
পর্যন্ত তার দলে থাকব তবে অবশ্যই ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনাকে বাদ দিয়ে।"
ফোটনবাবু ফোড়ন কাটলেন, “যতসব বাদুড়ে বুদ্ধি!ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনাকে বাদ
দিলে বিশ্বকাপ ফুটবলের আর থাকলোটা কি?”
পাকড়াশিবাবু কিছু বলতে যাচ্ছিলেন গগনদা ওনাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, “দাঁড়ান
তো, আগে ধনেপাতার বড়া খান সবাই। তারপর আবার চা দিচ্ছি।”
বিশ্বকাপের দৌলতে গগনদার এখন বেশ রমরমা বিক্রি-বাট্টা হচ্ছে। কারণ গগনদার
দোকানে টিভি আছে। খেলা দেখা চলছে তার সাথে চা আর নানা রকম পকোড়া চলছে। যাকে বলে পারফেক্ট
বিশ্বকাপ! এর মধ্যে দু-একটা ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটেছে। অভয়বাবুর গৌরীহাটে একটা সাপ্তাহিক
হোমিওপ্যাথি চেম্বার আছে। পরশুদিন হাটের শেষে আধা কেজি দেড় ইঞ্চি সাইজের মৌরলামাছ কিনে
সরাসরি গগনদার দোকানে ঢুকে প্রথম খেলাটা দেখে বাড়ি যাবেন ভেবে ছিলেন।মাছের থলেটা গগনদাকে
রাখতে বলে।খেলা দেখতে দেখতে রাত্রি বারোটার সময় গগনদা দোকান বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে
আমরা সবাই বাড়ি চলে যাই। অভয়ডাক্তারও চলে যান। পরদিন সন্ধ্যায় আমরা গগনদার দোকানে ঢুকলাম
চা খেতে খেতে খেলা দেখতে। গগনদা প্রথম রাউন্ড চা দেওয়ার একটু পরেই বললেন, “এই নিন সবাই
আজকের সেরা পকোড়া, মৌরলা পকোড়া! তবে দামটা একটু বেশি পড়বে এটার।”
বঙ্কুবাবু আরাম করে পকোড়ায় কামড় দিয়ে বললেন- আরে!এই মাছ তো গতকাল অভয়বাবু
এনেছিলেন না? কী অভয়বাবু?কিছু বলছেন না যে? বাড়িতে বৌদি কিছু বলে নি?
অভয়বাবু ব্যাজার মুখে পকোড়া খেতে খেতে বললেন - মাথা খারাপ! এমনিতেই দেরী
করে বাড়ি গেছি তার ওপর যদি শুনতো দোকানে মাছ ফেলে এসেছি তাহলে তখনি আমাকে হামানদিস্তায়
ছেঁচে দিতো। মাছের ব্যাপারে আমি গিন্নি কে কিচ্ছু বলিনি। হাফ কেজি একশো আশি টাকা নিয়েছিল।
খুব পছন্দ হয়েছিল মাছগুলো।
যাক, ছেঁচা থেকে খুব বেঁচে গেছেন তাহলে, আমি বলি।
'ছেঁচা তো বুকে লেগেছে হে ভূতুমবাবু মাছগুলো কিছু অপোগণ্ডের পেটে যাওয়ায়'
--- শুকনো গলায় উত্তর দেন অভয়বাবু।
কিইইই…!!!? --- পাকড়াশিবাবু উত্তেজিত হয়ে লুঙ্গি ঠিক করতে করতে বললেন, “আমরা
অপোগণ্ড? তবে রে বলে!!” অভয়বাবুর দিকে তেড়ে গেলেন।
আমরা কোনো রকমে পাকড়াশিবাবুকে আটকালাম।
পাকড়াশিবাবু হঠাৎ “জাপান জিন্দাবাদ বাদবাকি সব মুর্দাবাদ” বলতে বলতে বেরিয়ে গেলেন।
আমরাও আর কী করি? সবাই বাড়ির দিকে পা বাড়ালাম। কি জানিরে বাবা এই বিশ্বকাপ ঘিরে গগনদার
দোকানে আর কী কী ঘটবে!
ছবিঃ vecteeze
Ek kothay ashadharon dada,,darum
ReplyDelete