বিশ্বকাপ ২০২২ ও মনেপড়াঃ তপেশ দাশগুপ্ত




 

বিশ্বকাপ ২০২২ ও মনেপড়া

তপেশ দাশগুপ্ত


 

কাতার হারলো দুই শূন্য গোলে।

 

দুর্বল টিম এর সাপোর্টার হতে ভাল লাগে যদি না আমার নিজস্ব পছন্দের দল না খেলে।

আমি যখন খেলতাম আমার দলটায় একটু কমজোরি প্লেয়ার নিতাম। সেই চ্যালেঞ্জ নিতে ভালো লাগতো জেতার জন্য উদগ্র হয়ে উঠতা।

 

একবার মনে আছে সন্ধ্যা হয় হয়। এক গোলে পিছিয়ে আছি। একটা কাঁচা কুয়োয় বল পড়ে গেছে। বালতি দিয়ে ওঠাতে দেরী হচ্ছে দেখে আমি নিজেই সাপের গর্তগুলোয় পা দিয়ে পা দিয়ে নেমে গেছিলাম।

 

তারপর দেখি নিচে অন্ধকার

আর ঝুপুস করে পড়ে গেলাম

কিভাবে উঠে এসেছি মনে নেই।

 

আমার পিসতুতো দাদা খেলা দেখছিল আমার বোকামি দেখে একটা চেলাকাঠ হাতে নিয়ে আমাকে মারবেই। কোনমতে বাড়িতে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বাথরুমের দরজা বন্ধ করে দিই।

 


বিশুর সাথে খুব তর্ক হল। ও একটি বামপন্থী দলের হোলটাইমার। অনেকেই যে বলছে এবারের বিশ্বকাপ বয়কট করো, সে নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। অনেক পয়সার লেনদেন হয়েছে ব্লাটার অনেক পয়সা ঘুষ খেয়ে কাতারকে আয়োজক দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে, কাতার মৌলবাদী দেশ ওরা নানারকম ফরমান জারি করছে সেগুলো গণতন্ত্রের পরিপন্থী। বললাম প্রচারটা কে করছে। আমেরিকা, ইংল্যান্ডের বিবিসি আমাদের আনন্দবাজার তো তাদের সুরে সুর মিলিয়ে বলবেই। মার্কসের পূঁজি পড়ো, পুঁজির থেকে বড় শয়তান আর নেই। সারা পৃথিবীর খেটে খাওয়া মানুষের সমস্ত যন্ত্রণার জন্য দায়ী আমেরিকা। তাই হাজারবার না ভেবে ওদের মনমোহিনী প্রচারে গা ভাসাবো না।  সর্বোপরি এতগুলো প্লেয়ার এতদিন ধরে তৈরি হয়েছে বিশ্বকাপে খেলার জন্য তাদের স্বপ্ন ভঙ্গ হবে।

ইংল্যান্ড আর ইরানের খেলা দেখতে শুরু করলাম। সবকিছু ভেসে গেল নিজের মহাদেশকে সমর্থন, ইংল্যান্ডের সাম্রাজ্যবাদ,একটা পাজি দেশ, ফুটবল ভাসিয়ে গেল সবার পায়ে পায়ে।

আমি এই ম্যাচে ইংল্যান্ড এর সমর্থক হয়ে পড়লাম।

 

আগামীকাল আমার প্রাণের আর্জেন্টিনার খেলা

 

 

নিজের কোনোকিছুই নিজে ঠিক করি না। মেসির ভক্ত হয়েছি অন্যরা ঠিক করে দিয়েছে।

চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেখিয়ে বলেছে এই যে মেসি আর আমি স্বপ্নোত্থিতর মতো উঠে মেসিকে দেখেছি।

 

আবার দেখবো বলে জেগে থাকি।

 

অনেকেই বলেছে সিজিনাল সাপোর্টার। এটাও বা কম কি? শিলিগুড়িতে ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানের ডার্বি দেখতে গেছিলাম। যাদের সাথে গেছিলাম তারা যে কোন পজিশনের দু তিনজনের নাম জানে তাদের উপভোগকে হিংসা করতে করতে আমার খেলা দেখছিলাম। বিশ্বকাপও অনেকে সেরকম দেখবে। আমি সিজিনাল দেখবো মুগ্ধ হব। সেই গভীরে গিয়ে বল তুলে আনা মেসির পায়ে পায়ে দেখব। শুধু তার গভীরতা কতটুকু ছোঁব। মেসি টারজান না অরণ্যদেব না। সৌদি আরবের চোরাবালির থেকে ওঠাতে পারেনি ওর ফ্রি-কিক ঠিক জায়গায় ডিপ করে গোলে ঢুকে যায় নি। মেসির থেকে কে বেশি জানে কি হতে পারতো

 

 

আজকে রাত্রি সাড়ে বারোটায় আবার মেসি।

 

দুই বছর আগে এই দিনে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম ফেসবুকে “মেসি জিন্দা হ্যায়” ফুটে উঠেছে। আজকেই আবার শেয়ার করেছি। দেখি একজন শুধু কমেন্ট করেছে। মনে হয় পৌঁছয়নি কারো কাছে। যারা পৌঁছতে দিচ্ছে না তারা ফুটবল চায় না। ফুটবল গতির সমার্থক।তারা স্থবিরতা চায়। মানুষ তাদেরকে হারাচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম রাউন্ডের প্রত্যেকের একটা করে খেলা হয়ে গেছে। দ্বিতীয় খেলার থেকেই কেঁপে উঠছে বিশ্ব ফুটবল জ্বরে।

 


হোমঠেক

 

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

কল্যাণের সাথে কন্যামে । সত্যম ভট্টাচার্য

উপন্যাস পরিচয়। মুরাকামির উপন্যাস 'কাফকা অন দ্য শোর'। শুভ্র চট্টোপাধ্যায়

সাইকেলে নারীশক্তি আর টাউনের পুরোন যানবাহনঃ রণজিৎ কুমার মিত্র