ইস্টার ও ক্যালেন্ডার। সুপ্রিয় ঘটক।
- Get link
- X
- Other Apps
ইস্টার, ক্যালেন্ডার এবং ২০২২ সাল
সুপ্রিয় ঘটক
৩২৫ খ্রিস্টাব্দ। রোমের সম্রাট কন্স্টানটাইন এশিয়া মাইনরের নিকিয়া শহরে আহ্বান করলেন এক মস্ত বড় সভা| সমস্ত তাবড় তাবড় খ্রিস্টীয় যাজকদের সেখানে ডাকা হলো, তাদের যাওয়া আসা আর থাকার সমস্ত খরচ যোগালেন সম্রাট। এই সময় খ্রিস্টীয় যাজকদের মধ্যে ছিল নানান মতভেদ, কোনো কেন্দ্রীয় অনুশাসন না থাকায় যে যার মতো ধর্মের ব্যখ্যা দিচ্ছিলেন, এমন কি বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবের দিনগুলিও যে যার মতো দিনে মানছিলেন। এই সব বিভিন্ন ব্যখ্যাদাতাদের এক ছাতার তলায় এনে সমন্বয় সাধন ছাড়াও এই মহাসভার অন্যতম প্রধান কাজ ছিল খ্রিস্টানদের এক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব ইস্টারের একটি নির্দিষ্ট দিন ঠিক করা। তিনশ বছর ধরে ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টানরা সকলে মিলে একসাথে একদিনে ইস্টারের উৎসব পালন না করতে পেরে ক্ষুব্ধ ছিল। অবশ্য নির্দিষ্ট দিন ঠিক না হওয়ার কারণও ছিল। ইস্টার উৎসব পালন করা হয় যিশুখ্রিস্টের মৃত্যুর পর তার কবর থেকে পুনরুত্থানের দিনকে স্মরণ করে। কিন্তু তাঁর মৃত্যু বা পুনরুত্থানের দিনটি ঠিক কোন দিন ছিল? যে সমস্ত গসপেলের উপর নির্ভর করে যিশুর জীবন কাহিনী নির্মাণ করা হয় তারাও এ ব্যপারে হয় নিশ্চুপ না হয় পরস্পরবিরোধী তথ্য দিচ্ছেন। তবুও কিছু একটা মিল তাদের মধ্যেও পাওয়া যাচ্ছে। ম্যাথু, মার্ক এবং লুকের গসপেল একটি ব্যপারে একমত যে যিশুর পুনুরুত্থান ঘটে ইহুদিদের নিসান মাসের পাসওভার উৎসবের পরের রবিবারের দিনটিতে (যদিও জনের গসপেল নিসান মাসের অন্য একটি দিনের কথা বলে)। নিসান হলো ইহুদি ক্যলেন্ডারের সপ্তম মাস। এই ইহুদি ক্যলেন্ডার হলো একটি চান্দ্রসৌর ক্যলেন্ডার এবং প্রাচীন গ্রিক-ব্যবিলন ক্যলেন্ডারের উত্তরসুরী। এইখানে ক্যলেন্ডারের ব্যপারে একটু বলে নেই, যদিও স্ব্ল্পপরিসরে ক্যলেন্ডার নিয়ে আলোচনা প্রায় অসম্ভব।
“Noli me tangere” (touch-me-not), যিশুর পুনরুত্থান নিয়ে বিশ্ববিখ্যাত শিল্পী তিশিয়ানের আঁকা ছবি (১৫১৪ খ্রিস্টাব্দ)
ক্যলেন্ডার তিন রকমের হতে পারে - যেমন সৌর (উদাহরণ- ইংরেজি বা গ্রেগরিয়ান ক্যলেন্ডার), চান্দ্র( হিজরী বা মুসলমানীয় ক্যলেন্ডার) এবং চান্দ্র-সৌর (ইহুদি তো বটেই, আমাদের বাংলা ক্যলেন্ডারও এই গোত্রের)। সৌর ক্যলেন্ডার প্রাকৃতিক ঋতুচক্রের সঠিক অনুসরণ করে অর্থাৎ সূর্যের উত্তরায়ণ/দক্ষিনায়ন বা মহাবিষুব/জলবিষুব প্রতি বছর এই ক্যলেন্ডারের একটি নির্দিষ্ট দিনে (বা দু একদিনের সীমার মধ্যে) পড়ে। আধুনিক হিসেবে পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে একটি মহাবিষুব থেকে পরের মহাবিষুবে ঘুরে আসতে সময় নেয় ৩৬৫.২৪২১৯৯ দিন। যে ক্যলেন্ডার বছরের এই দৈর্ঘের সঠিক হিসেব রাখে সেই ক্যলেন্ডার প্রাকৃতিক ঋতুচক্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। গ্রেগরিয়ান ক্যলেন্ডারে হিসেব কষে বিভিন্ন অধিবর্ষে অতিরিক্ত একটি দিন যোগ করে চেষ্টা করা হয় যাতে বছরের গড় দৈর্ঘ্য সঠিক থাকে। চান্দ্র ক্যলেন্ডারে চাঁদের কলাকে মাস হিসেবে ধরা হয় – অমাবস্যা থেকে অমাবস্যা বা পূর্নিমা থেকে পূর্ণিমা। ফলে মাসের দৈর্ঘ্য ২৯ বা ৩০ দিন হয়, আবার এক বছরে ১২ মাস ধরে বছরের দৈর্ঘ্য হয় ৩৫৪ বা ৩৫৫। তাহলে দাঁড়াল সৌর বছরের চাইতে চান্দ্র বছর ১০/১১ দিন কম। এই বছর সৌর বছরের ১০ দিন আগেই শেষ হয়ে যাবে ফলে পরের বছর সব কিছুই ১০ দিন এগিয়ে আসবে। এই ক্যলেন্ডারে ঋতুচক্রের সঙ্গে তাল মেলে না এবং তাল মেলাবার কোনো চেষ্টাও করে না। অন্য দিকে চান্দ্রসৌর ক্যালেন্ডার হলো যে দুটো ক্যলেন্ডারের কথা আলোচনা করলাম সেই দুটোর এক জগাখিচুড়ি। এখানে চান্দ্র মাসের হিসেবই নেওয়া হয়, কিন্তু কোনো বছরে ১২, কোনো বছরে ১৩টি মাস ধরে বছরের গড় দৈর্ঘ্য ৩৬৫ দিন করার নিরন্তর প্রয়াস চলতে থাকে। চান্দ্রসৌর ক্যলেন্ডারে কিভাবে কোনো বছরে মাসের সংখ্যা ঠিক করা হবে সে ব্যপারে বিভিন্ন দেশের ক্যলেন্ডার প্রণেতারা একমত হননি। এখানে আলোচনায় যেহেতু ইহুদি ক্যলেন্ডারের প্রয়োজন তাই ইহুদি ক্যলেন্ডারের কথাই বলি। ইহুদি ক্যলেন্ডারে প্রতি উনিশ বছরে সাতটি বছরের দৈর্ঘ্য হয় ১৩ মাসের। এই উনিশ বছরের চক্রকে বলা হয় মেটন চক্র| চক্রের ৩, ৬. ৮, ১১, ১৪, ১৭ এবং ১৮ নম্বর বছরে এই অতিরিক্ত বছরটি যোগ করা হয়। এর ফলে ইহুদি বছরের গড় দৈর্ঘ্য প্রায় সৌর বছরের কাছাকাছি হয়।
লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা বিশ্ববিখ্যাত ছবি The Last Supper, যেখানে যিশুর শেষ ভোজন দেখানো হয়েছে
আবার ফিরে আসি ইস্টারের ব্যপারে। ইহুদিদের পাসওভার উৎসব একটি এক সপ্তাহব্যাপী উৎসব, হিব্রুদের মিশর থাকে এশীয় ভূখণ্ডে দল বেঁধে চলে আসার (এক্সোডাস) ঘটনাকে স্মরণ করে এই উৎসব পালন করা হয়। এই পাসওভার উৎসব পালন শুরু করা হয় নিসান মাসের ১৫ তারিখে। মনে রাখতে হবে ইহুদি ক্যলেন্ডারের চান্দ্রমাস গণনা করা হয় অমাবস্যা থেকে, ফলে নিসান মাসের ১৫ তারিখ মানে পূর্ণিমার দিন। অতএব পূর্ণিমার সঙ্গেও ইস্টারের একটা সম্পর্ক পাওয়া গেল। অতএব নিকিয়ার মহাসভার আগে থেকেই খ্রিস্টানদের মধ্যে ইস্টারের সঙ্গে ইহুদি ক্যলেন্ডারের নিসান মাসের পূর্ণিমার সঙ্গে সম্পর্কের কথা জানা ছিল। গসপেল অনুযায়ী যিশু জেরুসালেমে কোনো এক বৃহস্পতিবার রাতে পাসওভার ভোজে শিষ্যদের নিয়ে অংশগ্রহণ করেন, নিয়মানুযায়ী তিনি না-গাঁজানো রুটি এবং দ্রাক্ষাসব ভগবানের নামে নিবেদন করেন এবং শিষ্যদের সঙ্গে একত্রে আহার করেন। এটাই তাঁর শেষ আহার বা লাস্ট সাপার। এই শিষ্যদেরই মধ্যে একজন - যুডাস ইসক্যারিয়ট – তাঁকে পরদিন ধরিয়ে দেন এবং সেইদিন বা শুক্রবার তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয় এবং সেই দিনই তাঁর মৃত্যু হয়। পরদিন থেকে পবিত্র পাসওভার সপ্তাহ শুরু হবে বলে শুক্রবারই তাঁকে তড়িঘড়ি কবর দেওয়া হয়, তারই দুদিন পর অর্থাৎ রবিবার কবর থেকে যিশুর পুনরুত্থান ঘটে। এই পুনরুত্থানের দিনটিকেই ইস্টারের দিন হিসেবে পালন করা হয়। এই সবই ঘটে ইহুদি ক্যালেন্ডারের নিসান মাসে। কিন্তু নিসান মাসের অবস্থানও তো সৌর বছরের মধ্যে ঘোরা ফেরা করে, কখনো এগিয়ে আসে কখনো পিছিয়ে যায়। ফলে কবে নিসান মাস শুরু হবে সেই নিদান ইহুদি পুরোহিতরা দেবেন আর সেই অনুযায়ী ইস্টারের দিন ঠিক হবে সেটা অধিকাংশ খ্রিস্টানদের কাছে আপত্তিজনক ঠেকলো, বিশেষ করে সেই সময় যখন এন্টি-সেমিটিজম ক্রমশ মাথা চারা দিয়ে উঠছে। তাহলে উপায়? উপায় হলো তখনকার প্রচলিত সৌর ক্যালেন্ডারের (অর্থাৎ জুলিয়ান ক্যালেন্ডার, বর্তমান গ্রেগরিয়ান ক্যলেন্ডারের পূর্বসুরী) মাধ্যমে ইস্টার উৎসবের দিন ধার্য্ করা এবং মহাবিষুবের (বা বাসন্তী বিষুব-vernal euinox) সঙ্গে জুড়ে দেওয়া – মহাবিষুব যে একটি স্থির বিন্দু সেটা সবারই জানা ছিল। এই বার এই স্থির মহাবিষুবকে সামনে রেখে পূর্ণিমা আর রবিবারের ব্যাপারটা জুড়তে পারলেই কেল্লা ফতে। নিকিয়া থেকে যে সুত্র বের হলো সেটা হলো যে মহাবিষুবের পর প্রথম পূর্নিমা পেরিয়ে যে রোববার পাওয়া যাবে সেটাই হবে ইস্টারের দিন। আর যদি মহাবিষুবেরই দিন পূর্নিমা হয়? তবে মহাবিষুবের পরের রোববারই হবে ইস্টার।
কিন্তু ব্যপারটা অত সহজ মোটেই নয়। প্রথমতঃ, বছরের একটি নির্দিষ্ট তারিখেই ইস্টার উৎসব পালিত হবে সে আশায় ছাই পড়ল, দেখা যাচ্ছে ইস্টারের দিন মার্চ মাসের ২২ তারিখ থেকে এপ্রিল মাসের ২৫ তারিখের মধ্যে যে কোনো দিন হতে পারে। দ্বিতীয়তঃ সঠিকভাবে মহাবিষুবের দিন নির্ধারণ করা সেই সময়কার জ্যোতির্বিদদের আয়ত্তের বাইরে ছিল। ফলে জ্যোতির্বিদরা একটি নির্দিষ্ট তারিখ ২১এ মার্চকে মহাবিষুবের দিন বলে ধরে নিলেন। আধুনিক গণনায় আমরা জানি যে মহাবিষুবের দিন ১৯ থেকে ২১এ মার্চের মধ্যে যে কোনো দিনই হতে পারে। তৃতীয়তঃ তখনকার প্রচলিত যে জুলিয়ান ক্যলেন্ডারের ২১এ মার্চ কে মহাবিষুবের দিন ধরা হয়েছিলো সেই ক্যালেন্ডার নিজেই ছিল ভুল, আধুনিক হিসেবের তুলনায় সৌর বছরের দৈর্ঘ্য ১১ মিনিট বেশি ধরা হয়েছিল। এই ভুলেরই ফলে ৪৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জুলিয়ান ক্যলেন্ডারের শুরুর সময় তখনকার জ্যোতির্বিদরা মহাবিষুবের যে তারিখ বলেছিলেন ২৫শে মার্চ, ৩২৫ অব্দে নিকিয়ার সন্মেলনে জ্যোতির্বিদরা সেই তারিখ দেখলেন ২১শে মার্চ। তারা আর খতিয়ে ভুলের কারণ দেখলেন না, ক্যালেন্ডারেরও সংস্কার করলেন না, ২১শে মার্চ কে আঁকড়ে থাকলেন। পরে ক্যালেন্ডার সংস্কার হয়ে জুলিয়ান থেকে হলো গ্রেগরিয়ান, ১১ মিনিটের গন্ডগোল দূর হলো, কিন্তু আজও ইস্টারের গণনায় মহাবিষুবের দিন ওই ২১শে মার্চই ধরা হয়। আবার চার্চের মধ্যেও দুটো দল আছে – একদল মানে ভ্রান্ত জুলিয়ান ক্যলেন্ডার আর একদল মানে আধুনিক গ্রেগরিয়ান ক্যলেন্ডার। স্বভাবতই এদের মধ্যে ইস্টারের তারিখেরও বেশ কিছু দিনের মতো পার্থ্যক্য হয়। তবে সুখের বিষয় যে অধিকাংশ খ্রিস্টানরা আধুনিক গ্রেগরিয়ান ক্যলেন্ডার অনুযায়ী ইস্টারের দিন মেনে চলেন, আমিও এই আলোচনায় সেই মতই সমস্ত হিসেব দেখাচ্ছি।
নীচে এই বছর এবং গত দশ বছরের একটা সারণী দেওয়া হলো। একবার চোখ বুলিয়ে দেখুন কোন বছর ইস্টারের তারিখ সহজ সুত্র মেনে হয়েছে আর কবেই বা হয়নি।
খ্রিস্টাব্দ | প্রকৃত মহাবিষুব | ইস্টার গণনার মহাবিষুব | মহাবিষুবের পর পূর্নিমা(২১শে-র পর) | পূর্নিমার পর রবিবার | প্রকৃত ইস্টারের তারিখ |
২০১২ | ২০শে মার্চ | ২১শে মার্চ | ৫ই এপ্রিল | ৮ই এপ্রিল | ৮ই এপ্রিল |
২০১৩ | ২০শে মার্চ | ২১শে মার্চ | ২৭শে মার্চ | ৩১শে মার্চ | ৩১শে মার্চ |
২০১৪ | ২০শে মার্চ | ২১শে মার্চ | ১৪ই এপ্রিল | ২০শে এপ্রিল | ২০শে এপ্রিল |
২০১৫ | ২০শে মার্চ | ২১শে মার্চ | ৩রা এপ্রিল | ৫ই এপ্রিল | ৫ই এপ্রিল |
২০১৬ | ২০শে মার্চ | ২১শে মার্চ | ২২শে মার্চ | ২৭শে মার্চ | ২৭শে মার্চ |
২০১৭ | ২০শে মার্চ | ২১শে মার্চ | ১০ই এপ্রিল | ১৬ই এপ্রিল | ১৬ই এপ্রিল |
২০১৮ | ২০শে মার্চ | ২১শে মার্চ | ৩০শে মার্চ | ১লা এপ্রিল | ১লা এপ্রিল |
২০১৯ | ২০শে মার্চ | ২১শে মার্চ | ২১শে মার্চ | ২৪শে মার্চ | ২১শে এপ্রিল |
২০২০ | ২০শে মার্চ | ২১শে মার্চ | ৮ই এপ্রিল | ১২ই এপ্রিল | ১২ই এপ্রিল |
২০২১ | ২০শে মার্চ | ২১শে মার্চ | ২৮শে মার্চ | ৪ই এপ্রিল | ৪ই এপ্রিল |
২০২২ | ২০শে মার্চ | ২১শে মার্চ | ১৬ই এপ্রিল | ১৭ই এপ্রিল | ১৭ই এপ্রিল |
সারণী অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে সব বছরই দিব্যি সহজ সুত্র মেনেই হচ্ছিল কিন্তু বাদ সেধেছে ২০১৯ এর ইস্টারের তারিখ। সুত্র মতে যেখানে হওয়ার কথা ২৪শে মার্চ সেখানে হচ্ছে ২১শে এপ্রিল, প্রায় এক মাস পর।
আসলে ইস্টারের তারিখ গণনায় শুধু যে মহাবিষুবের দিন আলাদা নেওয়া হয় তাই না, পূর্ণিমার দিন গণনার পদ্ধতিও নিজস্ব। এই পদ্ধতিতে নির্ণীত পূর্ণিমাকে বলা হয় যাজকীয়(ecclesiastical) পূর্ণিমা, এই পূর্ণিমার দিন বেশির ভাগ সময়ই জ্যোতির্বিজ্ঞান নির্ণীত পূর্ণিমার দিনের সঙ্গে মিলে যায়- তবে সবসময় নয়। যাজকীয় পূর্নিমার গণনার সময় মেটনিক চক্র এবং আরো কিছু জটিল নিয়ম মানা হয় যার ফলে তার ফলাফল কখনও কখনও নিখুঁত জ্যোতির্বিজ্ঞানের নিরীক্ষিত ফলাফলের সঙ্গে মেলে না। ২০১৯ হচ্ছে এই রকম একটি না-মেলা বছর। এই বছরটিতে যাজকীয় পূর্নিমার দিন ২০শে মার্চ, কিন্তু মহাবিষুবের দিন ২১শে মার্চ(নিকিয়া মহাসভায় ঠিক করা), ফলে মহাবিষুবের পরের পূর্নিমা হলো ১৮ই এপ্রিল। ১৮ই এপ্রিল শুক্রবার(গুড ফ্রাইডে), তাই ইস্টারের দিন তার পরের রবিবার অর্থাৎ ২১শে এপ্রিল। এখানে দেওয়া সারণী হিসেবে ১১ বারে একবার মাত্র সহজ সূত্রের সঙ্গে যাজকীয় তারিখের মিল ঘটে নি, তবে যদি আমরা ১৫৮৩ থেকে ২৫৮২ সাল অবধি হাজার বছরের হিসেব নেই তাহলে এই অমিলের ঘটনা ঘটতে দেখব ৭৮ বার।
এটা পরিষ্কার যে চাঁদের কলার সঙ্গে কোনো উৎসবের দিন জুড়ে থাকলে তাকে ক্যলেন্ডারের কোনো নির্দিষ্ট দিনে বাঁধা অসম্ভব – এই দিনটি এক ভেসে বেড়ানো উৎসবের দিন। খুব জোর এই ভেসে বেড়ানোকে একটা সময় সীমার মধ্যে আটকে রাখা যেতে পারে। সাধারণ লোকের পক্ষে এ এক ঝকমারি, নতুন বছরের ক্যলেন্ডার বা পঞ্জিকা প্রকাশ না হওয়া অবধি জানার উপায় নেই সেই বছর ক্যলেন্ডারের কোন তারিখে উৎসবের দিনটি পড়ল। ইহুদিদের পাসওভার, খ্রিস্টানদের ইস্টার বা আমাদের দুর্গাপূজা – এইখানে এসে সবাই এক। অবাক হওয়ার কিছু নেই, কোনো এক গ্রাম্য কবি তো সেই কবেই গেয়ে গেছেন – “খ্রিস্টে আর কৃস্টে কিছু তফাৎ নেই রে ভাই”।
ঋণস্বীকার:
১. সাল তারিখের ইতিহাস – পলাশ বরন পাল
২. যীশুচরিত – তপনমোহন চট্টোপাধ্যায়
৩. The calendar – David Ewing Duncan
৪. বিভিন্ন ওয়েব সাইট
Comments
Post a Comment