কল্যাণের সাথে কন্যামে । সত্যম ভট্টাচার্য
কল্যাণের সাথে কন্যাম্-এ
সত্যম ভট্টাচার্য
কেন যে এরকমটা হচ্ছে কিছুদিন ধরে কে জানে। সামান্য
একটু উত্তেজনা হলে রাতে কিছুতেই ঘুম আসতে চাইছে না। অথচ বের হতে হবে খুব সকালে। তাই
তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়াটা খুব দরকার ছিল। কিন্তু বাধ সাধলো ঐ আকাশ। রাত্রিবেলা আড্ডা দিয়ে
বাড়ি ফেরার পথে সেখানে চাঁদটা এমন ঝকঝকে দেখাচ্ছিল যে মনে হল পরদিন আকাশে এক ফোঁটাও
মেঘ থাকবে না আর চমৎকার হবে আমাদের পাহাড়ভ্রমণ। আর তাতেই যত উত্তেজনা।
যাইহোক
শেষ যখন ঘড়িটা দেখলাম তখন তাতে রাত দুটো পেরিয়ে গিয়েছে। এদিকে আমাদের জার্নি শুরু করবার
কথা সকাল সাড়ে ছটায়। কিভাবে তা সম্ভব হবে ভাবতে ভাবতেই কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছি।
ঘুম ভাঙল সময়মতোই। বুঝলাম সে পুরো হয়নি আর সারাদিন ভোগাবে। কিন্তু কোনো উপায় নেই। এখন
তৈরি হতে হবে। এদিকে দরজা খুলে বাইরে গিয়েই চক্ষু চড়কগাছ। কোথায় এক ফোঁটাও মেঘ না থাকা
আকাশ! পুরো মেঘের চাদর গায়ে জড়িয়ে সে যেন বসে আছে। রাস্তা
ভিজে। তার মানে রাতে বৃষ্টি হয়েছে।
কিন্তু
যতই এগোচ্ছি আবহাওয়া যেন আরো খারাপ হচ্ছে। কখোনো বৃষ্টির জন্য রেইনকোট গায়ে চাপাতে
হচ্ছে। এই করতে করতেই কখন যেন আমরা দুজন শিলিগুড়ি পেরিয়ে পৌঁছে গিয়েছি শুকনা। গন্তব্য
খুব নির্দিষ্টভাবে ঠিক করা না থাকলেও আগের দিন রাতেই ভেবে রেখেছিলাম যে এগোবো মিরিক
বাইপাস ধরে গোপালধারা,
থরবু, গুফাপাতাল হয়ে সীমানা, সুখিয়াপোখরি, লেপচাজগত এইসব রাস্তায় ধরে কারণ সীমানা
বা লেপচাজগত থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য অসাধারণ।
আর যদি
সম্ভব হয় তাহলে ঘুরে আসবো নেপালের কন্নম। কয়েক বছর ধরেই লোকজন খুব যাচ্ছে কন্নমে। ছবি
দেখছি ফেসবুকে। কিন্তু এই রাস্তায় ঠিক কোথা থেকে কন্নমে ঢুকতে হয় তা জানা ছিল না। কারণ
যতবারই গুগলম্যাপ দেখছি সে দেখাচ্ছে পানিট্যাঙ্কি, মেচি পেরিয়ে কাঁকরভিটা হয়ে যেতে হয়
কন্নম। আবার যারা ঘুরতে যায় দেখি তারা ঐ মিরিকের রাস্তাতেই কন্নম ঘুরে আসে। তাই ব্যাপারটা পুরো কনফিউসিভই
ছিল আমাদের কাছে।
কিন্তু যাই হোক সব কিছুর জন্য আকাশটা পরিষ্কার থাকা খুব দরকার ছিল। শুকনাতে দাঁড়িয়েই এবারে সঙ্গী কল্যাণকে প্রশ্ন করলাম- এগোবো কি আর ঐ পথে না কি শুকনা থেকে সোজা এগিয়ে রংটং, তিনধারিয়া হয়ে কার্শিয়াং অব্দি গিয়ে আবার রোহিণী হয়ে নেমে আসবো? এবারে এক সময়ের বহু ঘুরে বেড়ানোর সঙ্গী কল্যাণই সাহস দিল-চল না আগের রাস্তাতেই এগোই, যদি খুব অসুবিধা হয় তাহলে না হয় আর না এগিয়ে নেমে আসবো বা থেকে যাবো কোথাও একটা।
তাই এগোলাম।
গাড়িধুরায় পরোটা তরকারি আর বড় গ্লাসে চা খেয়ে একে একে পেরিয়ে যেতে লাগলাম পানিঘাটা,
দুধিয়া। সদ্য দুর্গাপুজো গিয়েছে। দুধিয়ার খরস্রোতা নদীর পাশে কি সুন্দর যে কাশ ফুটে
রয়েছে লিখে বোঝানো যাবে না। সে সব পেরিয়ে একসময় মেঘ আর পাইনবনের মাঝে এসে পড়তেই বুঝলাম
যে মিরিকের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি আমরা। কিন্তু আমরা তো মিরিক ঢুকবো না। তাই ডানদিকে
না গিয়ে সোজাই এগোলাম। গোপালধারা বা থরবুর অসাধারণ সুন্দর চা বাগানের ওপর দিয়ে মেঘ
ভেসে বেড়াচ্ছে। অপূর্ব দৃশ্য। এ ভাবেই এগোতে এগোতে একসময় পৌঁছে গেলাম গুফাপাতাল।
আর গুফাপাতালে
পৌঁছেই মনটা খারাপ হয়ে গেল আমাদের। যে রকমের মেঘ গুফাপাতাল থেকে চারিদিকের পাহাড়কে
ঢেকে রেখেছে তাতে সব সাদা হয়ে আছে। যে সুন্দরকে দেখার জন্য এতদূর থেকে গিয়েছি তা কিছুই
দেখা যাচ্ছে না। দুজনে দু কাপ চা নিয়ে আবার বসে থাকলাম খানিকক্ষণ। কি করবো আমরা? এগোবো না পিছিয়ে
নেমে যাবো না কি এখানেই কোথাও একটা আস্তানা খুঁজে নিয়ে মেঘ কুয়াশার দিকে তাকিয়ে বসে
থাকবো বাকি দিনটা? বেলা তখন বারোটা মত বাজে। তাই যা সিদ্ধান্ত
নেবার নিয়ে নিতে হবে। কারণ সময়টা অক্টোবরের শেষদিক। দুপুরের পর থেকে চোখের পলক ফেলতে
না ফেলতে বেলা গড়িয়ে যাবে সন্ধের দিকে।
আবার কল্যাণ বললো- চল এগোই, যা হবে দেখা যাবে, আরো ঘন্টা দুয়েক সময় তো কম করে হাতে আছে এখনো, তার মধ্যে কিছু একটা হয়ে যাবে ঠিক। তাই আবার এগিয়ে চললাম। রাস্তাও চমৎকার এখন। আর রাস্তার দৃশ্যও অসাধারণ, অপরূপ সুন্দর। তবে গাড়ি সে টু হুইলার হোক বা ফোর হুইলার, গতি খুব না বাড়িয়ে সাবধানে চালানোই ভালো। এই করতে করতেই আমরা পৌঁছে গেলাম পশুপতি আর পৌঁছে গিয়েই বুঝলাম যদি আমাদের কন্নম যেতে হয় তাহলে এখান থেকেই ঢুকে যেতে হবে নেপালে।
দেখতে দেখতে
আর লোককে জিজ্ঞেস করতে করতে এগোচ্ছি। পেয়েও গেলাম। একটা ছোট্ট ঘর, সেখানেই সব হচ্ছে।
কাগজ করে যখন বের হচ্ছি ঐ অফিসেরই এক ভদ্রলোক বুঝতে পেরেছেন যে আমাদের কোন ধারণাই নেই
কন্নম সেখান থেকে কত দূর বা সে পথে আর কিছু পড়বে কি না এইসব বিষয়ে। তিনি সুন্দর করে
আমাদের বুঝিয়ে দিলেন যে সেখান থেকে খানিক এগিয়েই পড়বে গৌতম বুদ্ধের একখানা পার্ক। তারপর
আমাদের কোন পথে কিভাবে এগোতে হবে সেই সবও বুঝিয়ে দিলেন আর এও বললেন যে এই পথে আমাদের
আর ফেরার দরকার নেই। কারণ আমরা এবারে কাঁকরভিটা হয়েই বেরুতে পারবো। কিন্তু বেরুতে হবে
সন্ধে ছটার মধ্যে।
মেঘ দেখে
কেউ করিস নে ভয়
আড়ালে তার
সূর্য হাসে…
কিন্তু
আমাদের তো ফিরতে হবে। আর ফিরতে হবে ছটার মধ্যে। ততক্ষণে তিনটে বেজে গিয়েছে। তাই ইচ্ছে
থাকলেও আর বেশিক্ষণ থাকা হল না সেখানে। এক ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করাতে সে বলল দূরত্ব
সত্তর কিমি। দুরু দুরু বুকে আর দেরি না করে রওনা দিয়ে দিলাম। পৌঁছতে পারবো তো এইটুকু
সময়ের মধ্যে, আলো থাকবে তো পাহাড়ি পথে?
যাই হোক, আনুমানিক অর্ধেক
পথের পরেই আমরা কাঁকরভিটা পেরিয়ে মেচি নদী হয়ে ঢুকে পড়তে পেরেছিলাম নিজের দেশে।
Kub sundor hoyeche....r abaar ghora hoyegelo...kenyam...
ReplyDeleteThanks
Delete